বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে-এমন অভিমত দিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তার অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করে। অন্য সদস্যরা ছিলেন-বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জবানবন্দির শেষ অংশে মাহমুদুর রহমান বলেন, একজন সাংবাদিক, লেখক ও ইতিহাস গবেষক হিসেবে আমি গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শাসনের উত্থান, বিকাশ ও পতনের প্রত্যক্ষদর্শী। নিয়মিত লেখালেখি ও সভা-সমাবেশে বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে জানাতে চেষ্টা করেছি। আমি চাই, অপরাধীরা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পাক। ন্যায়বিচার হলে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শহীদ পরিবার ও ২০ হাজার আহত পরিবারের শোক অন্তত কিছুটা লাঘব হবে। তার ভাষায়, ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে ভবিষ্যতের সরকারগুলোকেও সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেমন হিটলারকে বলা হয়েছিল ‘নেভার অ্যাগেইন’, তেমনি বাংলাদেশেও এই বিচারের মাধ্যমে যেন ফ্যাসিস্ট শাসনের পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে। নিশ্চিত হোক, গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের ইতিহাস আর যেন না ফিরে আসে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা শুরু করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এখনো সেই জেরা চলমান রয়েছে।
এর আগের দিন সোমবার সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে বিকেল পর্যন্ত তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তবে শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার অবশিষ্ট সাক্ষ্য ও জেরার জন্য সময় নির্ধারণ করে ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষ্যে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন-শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট রূপ দেওয়ার পেছনে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ, গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদরা সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যে বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন এবং সেনাবাহিনী বিশেষত ডিজিএফআই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডিজিএফআইকে ব্যবহার করতে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দীক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আর বিচার বিভাগের মধ্যে বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দীকি, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নিজামুল হক এবং বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিশেষভাবে ফ্যাসিবাদকে শক্তিশালী করেছে।