ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আসেন। তবে এর আগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জেরা শেষ না হওয়ায় সেদিন নাহিদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজি মনোয়ার হোসেন। পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমি হয়তো শেষ সাক্ষী হতে যাচ্ছি। আমার সাক্ষ্য নেওয়ার পর মামলাটি রায়ের দিকে অগ্রসর হবে।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট। এর অর্থ হলো মামলাটি দ্রুত রায়ের দিকে যাবে। তবে বাকি মামলাগুলোও যেন একই গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলে। এজন্য নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত সরকারের। এনসিপির আহ্বায়ক আরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন-সব রাজনৈতিক দল যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে, নির্বাচনের পরও জুলাই গণহত্যার বিচার অব্যাহত থাকবে। এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রথম দিনের মতো জবানবন্দি দেন মাহমুদুর রহমান, আর মঙ্গলবার তিনি অবশিষ্ট জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) মামলার ১৫তম দিনে মাহমুদুর রহমান ও নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য হওয়ার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তারা হাজির হতে পারেননি বলে প্রসিকিউশন পক্ষ জানায়।
এরও আগে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) মামলার ১৪তম দিনে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের ৪৫তম সাক্ষী হিসেবে সিআইডি ঢাকার ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের সাব-ইন্সপেক্টর মো. শাহেদ জোবায়ের লরেন্স তার জবানবন্দি প্রদান করেন। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) মামলার ১৩তম দিনে তিনজন সাক্ষ্য দেন। তারও আগে গত ২ সেপ্টেম্বর ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির হন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি আসামি থেকে পরে রাজসাক্ষী হন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর। সাক্ষ্যগ্রহণে গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেশব্যাপী সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এসব অপরাধের জন্য শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠায় তথ্যসূত্র, চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠায় জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণ এবং দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায় শহীদদের তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে মোট ৮১ জনকে। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এ প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা দেয়।